আজ ২৬ এপ্রিল, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী মনীষীদের অন্যতম, হাফিজ আল্লামা নুরুদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ.)-এর ২০তম ওফাত দিবস। ২০০৫ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালে ইসলামী জগত হারায় এক উজ্জ্বল দীপ্তি, এক আধ্যাত্মিক বাতিঘর।
জন্ম ও শৈশব: ১৯২৪ সালে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার শিওরখাল মোল্লাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও দ্বীনদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতা মাওলানা জহুর উদ্দিন (রহ.) ছিলেন পরহেজগার ও বিজ্ঞ আলেম, এবং মাতা ছুরতুন্নেসা (রহ.) ছিলেন ইবাদতগোজার, বিদুষী ও ধার্মিক নারী। ছোটবেলায় পিতাকে হারিয়ে মা-ই হয়ে ওঠেন তাঁর শিক্ষাগুরু, প্রেরণাদাত্রী ও মনের অবলম্বন।
শিক্ষা জীবন: পারিবারিক পরিবেশেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয়। এরপর সুলতানপুর মক্তব এবং জালালপুর মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ভাগ্যের নতুন বাঁক আসে যখন তৎকালীন বিখ্যাত বুযুর্গ মাওলানা বশির উদ্দিন (রহ.) তাঁকে নিজের আশ্রয়ে নিয়ে নেন। তাঁর হাতে গড়ে ওঠে নুরুদ্দীন গহরপুরীর এক দীপ্তিমান আলেমের চরিত্র।
তিনি দ্রুতই হিফজুল কুরআন সম্পন্ন করেন এবং বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। পরে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। দেওবন্দে থাকাকালে শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.), ক্বারী তৈয়্যব (রহ.), মাওলানা এজাজ আলী আমরুহী (রহ.) প্রমুখ মনীষীদের নিকট ঘনিষ্ঠতা ও সান্নিধ্য লাভ করেন।
কর্মজীবন ও অবদান: দেওবন্দ থেকে ফিরেই ১৯৫২ সালে বরিশালের পাঙ্গাসিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় সরকারী শায়খুল হাদিস হিসেবে যোগ দেন। এখানে ইলমে হাদিসের খেদমতে নতুন মাত্রা যোগ করেন।
পরবর্তীতে নিজ গ্রাম গহরপুরে ফিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন "জামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর"। তাঁর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান আজ দেশে-বিদেশে হাজার হাজার আলেমে দ্বীন তৈরি করেছে। ১৯৯৬ সালে দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন।
তিনি পাকিস্তান আমলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-এর সক্রিয় নেতা হিসেবে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তবে সবসময়ই ইলম, তারবিয়ত, তাযকিয়া, সমাজসেবা ও আধ্যাত্মিক উন্নতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইন্তেকাল ও উত্তরাধিকার: ২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি চার স্ত্রী, একমাত্র পুত্র হাফিজ মাওলানা মোসলেহুদ্দীন রাজু ও চার কন্যাসহ অসংখ্য ছাত্র ও গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে, এবং কবরের মাটি নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কারণে সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হাফিজ মাওলানা মোসলেহুদ্দীন রাজু ঐতিহ্যবাহী জামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুরের মুহতামিম হিসেবে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন।
আজ তাঁর ওফাত দিবসে জামিয়া গহরপুর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ দোয়া মাহফিল। ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিরবে স্মরণ করা হচ্ছে এই মহান ব্যক্তিত্বকে।
Tags
ইসলাম ও সংস্কৃতি