শিরোনাম

শারদীয় ছুটিতে পর্যটকের ঢল: সিলেটের প্রকৃতির কোলে উপচে পড়া ভিড়

: বালাগঞ্জের আওয়াজ
প্রকাশ: ২০২৫-১০-০৪

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সিলেট প্রতি বছরই পর্যটনপ্রেমীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। পাহাড়, নদী, ঝরনা আর পাথরের টানে সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখাল ও সাদা পাথর যেন সবসময়ই ভ্রমণার্থীদের আহ্বান জানায়।

শারদীয় দুর্গোৎসব ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের অবকাশে এবার সেই পর্যটনপ্রবাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির কন্যা সিলেটে।

গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিশেষ করে গোয়াইনঘাট ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকের ঢল নামে। কেউ নৌকায় চড়ে ঘুরেছেন খাসিয়াপল্লি, চা-বাগান ও ঝুলন্ত ব্রিজে, কেউবা সময় কাটিয়েছেন নদীর তীরে। মেঘলা আকাশ আর মাঝে মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ছোঁয়ায় বেড়েছে ভ্রমণপিয়াসীদের আনন্দ।

রংপুর থেকে পরিবার নিয়ে আসা পর্যটক হাবিব উল্লাহ বলেন, “টানা ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে জাফলং ঘুরতে এসেছি। পাহাড়, নদী আর ঝুলন্ত ব্রিজ—সব মিলিয়ে অভূতপূর্ব লাগছে।”

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ছিল তৎপর। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ তপন তালুকদার জানান, “সব পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”

এদিকে, বাড়তি পর্যটনচাপ সামলাতে হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো ছিল ব্যস্ত সময় পার করা। অধিকাংশ কক্ষ আগেভাগেই বুকিং হয়ে যাওয়ায় অনেক ভ্রমণার্থীকে বিকল্প থাকার ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের বিক্রি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

তবে পর্যটন খাতের এই উত্থানের মাঝেও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে রয়েছে চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাদা পাথর এলাকায় পাথরলুট ও অনিয়মের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল।

এ প্রেক্ষাপটে সিলেটের পর্যটনকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করতে সরকার হাতে নিয়েছে একটি সমন্বিত ‘পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান’। এতে জেলার ছয়টি জনপ্রিয় স্পট—বিছনাকান্দি, সাদা পাথর, জাফলং, উৎমাছড়া, লালাখাল ও রাতারগুলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, “এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে সিলেটের পর্যটন খাত নতুন মাত্রা পাবে।”

সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী চৌধুরী জুয়েলও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “পরিকল্পনাটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে সিলেটে পর্যটনের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে।”

ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও পরিবেশ–স্থাপত্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে। পর্যায়ক্রমে তারা অন্য পর্যটন স্পটগুলোও পরিদর্শন করবেন।

স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, “আমরা এমন পরিকল্পনা নিচ্ছি, যাতে পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বজায় থাকে।” একইসঙ্গে সবুজ স্থাপত্যের প্রবক্তা অধ্যাপক রফিক আজমের মতে, “পর্যটন উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষা এখন সময়ের দাবি।”

মাস্টারপ্ল্যান সমন্বয় কমিটির সভাপতি ড. বজলুর রশিদ জানান, পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিয়েই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পে নেদারল্যান্ডস সরকারের সম্ভাব্য অর্থায়নের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে সিলেটের সামগ্রিক অর্থনীতি ও পর্যটনের রূপরেখা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, আর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সিলেট হয়ে উঠবে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন নগরী।

 

error: Content is protected !!