ডায়াবেটিস এখন এক পরিচিত রোগ হলেও এর আগের ধাপ— প্রি-ডায়াবেটিস— নিয়ে অনেকেরই ধারণা কম। এই অবস্থায় রক্তে শর্করা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তবে এখনো ডায়াবেটিসের পর্যায়ে পৌঁছায় না। সুখবর হলো, এই সময়টাতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনলে অনেক ক্ষেত্রেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব।
প্রি-ডায়াবেটিস মানে হলো শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, কিন্তু সেটা ডায়াবেটিস ধরা পড়ার মতো উচ্চ পর্যায়ে নয়। এ অবস্থায় অনেকেই ভাবেন, ভবিষ্যতে হয়তো ডায়াবেটিস হবেই। কিন্তু বাস্তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যায়।
বাইরে থেকে তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না বলে অনেকেই রুটিন চেকআপের সময় হঠাৎ জানতে পারেন তাদের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়েছে। কিছু কারণে ঝুঁকি বেশি হয়, যেমন:
বয়স বৃদ্ধি
অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটে মেদ জমা
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস
পারিবারিক ইতিহাস
নির্দিষ্ট কিছু জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ক্ষেত্রে
শরীরের ইনসুলিন হরমোন ঠিকমতো কাজ না করলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। ওজন বেশি হলে বা চর্বি জমলে এই সমস্যাটি শুরু হয়, যা প্রি-ডায়াবেটিসে রূপ নেয়।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান ওজনের মাত্র ১০% কমাতে পারলেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তবে ওজন কমানোর পরিকল্পনা শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. ওজন ধরে রাখুন
ওজন কমানোর পর সেটাকে দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সহজে মানিয়ে নেওয়া যায় এমন খাদ্যাভ্যাস বেছে নিন। যেমন— লো-কার্ব ডায়েট, ভিগান ডায়েট বা ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার।
৩. যেসব খাবার এড়ানো দরকার
অতিরিক্ত চিনি ও সফট ড্রিংকস
প্রক্রিয়াজাত মাংস ও বেশি রেড মিট
সাদা পাউরুটি, ময়দা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার
অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার
৪. যেসব খাবার উপকারী
শাকসবজি ও ফলমূল (যেমন ব্লুবেরি, আপেল, আঙ্গুর)
গোটা শস্যজাতীয় খাবার (ওটস, ব্রাউন রাইস, আটার রুটি)
দই, পনির (লো-ফ্যাট)
চিনি ছাড়া চা ও কফি
এসব খাবার গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রি-ডায়াবেটিস মানে অসুস্থ হয়ে যাওয়া নয়। বরং এটি শরীরের এক ধরনের সতর্ক সংকেত। এখনই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারলে ডায়াবেটিস পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব।
নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
প্রতিদিন কিছুটা হাঁটা বা ব্যায়াম করা
পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
প্রি-ডায়াবেটিসকে ভয় না পেয়ে বরং এটাকে সুযোগ হিসেবে নিন— আজই ছোট পরিবর্তন শুরু করুন, ভবিষ্যতে বড় উপকার পাবেন।