কয়েকদিনের বিরতির পর আবারও সিলেট নগরীতে শুরু হয়েছে পুলিশের অভিযান। রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চলা এই অভিযানে মোট ৩৭টি অবৈধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সিলেট মহানগরীকে অবৈধ যানবাহন মুক্ত করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে গত ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা অভিযানে আড়াই শতাধিক অবৈধ যানবাহন আটক এবং প্রায় ৮১টি মামলাও দায়ের করা হয়। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যৌথভাবে বেশ কয়েকটি গ্যারেজে অভিযান চালায়। এতে ১০টি মিটার, বৈদ্যুতিক কেবল এবং অসংখ্য চার্জিং পয়েন্ট জব্দ করা হয়।
সিলেট নগরীর যানজট নিরসনের অংশ হিসেবেই এই অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। আটক হওয়া যানবাহনের বেশিরভাগই ব্যাটারিচালিত রিকশা। দীর্ঘদিন ধরে নগরীর ট্রাফিক বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হিসেবে এসব রিকশাকে দায়ী করছেন প্রশাসন ও সাধারণ নাগরিকরা।
প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলত সিলেট মহানগরীতে। বেপরোয়া চলাচল ও অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংয়ের কারণে রাস্তায় ছিল চরম বিশৃঙ্খলা। তবে অভিযানের পর অনেক চালক রিকশা নিয়ে নগর ছাড়তে শুরু করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে রিকশা বোঝাই ট্রাক বা ভ্যানে চালকদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য। কেউ কেউ আবার ক্ষোভে ও হতাশায় নিজের রিকশা ভেঙে ফেলছেন বা পুড়িয়ে দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
তেররতন এলাকার রিকশাচালক ও গোয়াইনঘাটের বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন (৪২) বলেন, “নগরীতে আর কাজ পাওয়া যাচ্ছে না, বাধ্য হয়েই গ্রামে ফিরছি। আজ রাতেই গোয়াইনঘাটে যাচ্ছি গাড়ি নিয়ে।”
একই এলাকার আরেক চালক আব্দুল মজিদ (২৮) জানান, “গাড়িটা কেউ কিনল না, চালাতেও পারি না। ৭০ হাজার টাকার রিকশা মনের কষ্টে পুড়িয়ে দিলাম।”
যানজটমুক্ত নগরীর পক্ষে বেশিরভাগ নাগরিক একমত হলেও, অনেকেই মানবিক বিবেচনায় অন্তত পাড়া-মহল্লায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলার সুযোগ রাখার আহ্বান জানাচ্ছেন। সম্প্রতি এই দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে।
তবে এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেটের দুই নেতা আবু জাফর ও প্রণবজ্যোতি পালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক ও মালিকদের বিক্ষোভে তারা সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম পূর্বে জানিয়েছিলেন, অবৈধ যানবাহনগুলোকে মহানগর এলাকা থেকে সরিয়ে মেট্রোপলিটনের বাইরে পাঠানো হবে। নগরীতে চলমান অভিযানের অগ্রগতি দেখে অনেকে বলছেন, সিলেট এখন সেই দিকেই এগোচ্ছে।